বায়স্কোপ

হায়রে ভাই, ছোটবেলায় একটাই চ্যানেল। ভালো হোক খারাপ হোক, নাচানাচি থাক, কার্টুন থাক, টিভি খুললেই বিটিভি। কত শুক্রবার গেল মুভি দেখে। পরে আসলো সিসিমপুর।

মার মুখে শোনতাম, বাবা সারাদিন ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে রাতে নাটক দেখতো। অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, বহুব্রীহি - এইগুলা দেখার নেশা যে কত বেশি হতে পারে একটা শুরু করলেই বুঝা যায়। তখন আবার ফেলুদার নাটক দেখাতো। সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় সব্যসাচী আর শাশ্বত এর কম্বিনেশন সত্যজিতের সৌমিত্রকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও বাঙালির মনে সব্যসাচী আর ফেলুদা যেন একই নাম হয়ে যায়।

আর তার পরেই সেই সময়। সব্যসাচী, বিভূ আর পরমব্রত - পার্ফেক্ট কম্বিনেশন। এত পেশাদার অভিনয় কমই হয়। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর প্রয়াত হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় - এরা সেই আদিম যুগের নক্ষত্র।

যাই হোক, বিটিভি মিস হয়। প্রতি সন্ধ্যায় আর শুক্রবার আর আগের মতো হয় না। সময় বড়ই বিশ্বাসঘাতক।

কিছু কিছু নাটক নিয়ে বলা আরও উচিত কারণ একসময় নাটকটা আর পাঁচ দশটা বিনোদনের মাধ্যম হয়ে থাকে না। নব্বইয়ের দশকটা যে কী ছিল তা একমাত্র তারাই জানেন যারা সময়টাতে পরিপূর্ণ কিছু সময় কাটিয়ে আসছেন।

কলেজে পড়ার সময় হোস্টেলে থাকার একাকী দিনগুলোতে বিনোদনের খোরাক হিসেবে একটা নামই ছিল, "কোথাও কেউ নেই"। রাতটা অপেক্ষা করে বসে থাকতাম কখন একটা পর্ব দেখব। ফোনে ডাউনলোড করা ছাড়া দেখার আর কোনো উপায় ছিল না, তবুও চেষ্টা করতাম সেই সময়ের মানুষগুলো কীভাবে রাতের পর রাত এই মাস্টারপিসটা দেখার জন্য প্রহর গুণত। ভাই এইগুলা অল্প অল্প করে মনের ভেতর ঢুকে একদম বসে যায়।সহজে ছাড়ে না।যেসময় শেষ হয়ে যায়,এক বুক হতাশা রেখে যায়।

বহুব্রীহি দেখতেসি আজ নিয়ে দশ দিন হলো। বিটিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিদিন একটা করে পর্ব আপলোড করে আর সেটা দেখার জন্য বিভোর হয়ে বসে থাকি।

একাকীত্ব, হতাশা, মন খারাপ?

আমি বাজি ধরতে পারি, নিরাশ হবেন না। কবে যে এরকম মাস্টারপিসগুলো দল বেঁধে হানা দেবে, কে জানে।

আধুনিকতা মানে শেকড়কে উপড়ে ফেলে দেয়া না, তাকে ছড়ানোর পদ্ধতিগুলোর সংস্কার করা।

21st April, 2017