কোভিড-১৯

আমি মার্চের ১২ তারিখ বাড়িতে গিয়ে ১৩ তারিখ ঢাকা আবার রওনা হলাম। কেন গেলাম? সেমিস্টার ফি দেওয়ার লাস্টডেট ১৫ তারিখ। (এইখানেও একটা ঘাপলা আছে। ভাই যেইনে দেখতেসেন এত করোনার জন্য এতকিছু হইতেসে, লাস্ট ডেটটা একসপ্তাহ আগে বাড়াইতে পারলেন না? ১৬ তারিখ তো ঠিকই বাড়াইসেন, মাঝে দিয়া আমার ১২ টা বাজাইসেন) ঝামেলা হলো সেদিন ময়মনসিংহ নেত্রকোনা সড়ক অবরোধ করা হইসে। কোনোকিছুই যাইতে দিতেসে না রাত থেকে। এই খবর আমি জানতাম না। প্রায় সাড়ে এগারো কেজির এক ব্যাগ হাতে আর আরেক ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আমাকে পাবলিক একটা বাসে উঠায়া দেওয়া হলো, গেইটলক তখন সব বন্ধ।

এর পরেরটুকুর জন্য যে এত ভোগা লাগবে আমি বুঝি নাই। আগের দিনও তিনটা মাস্ক পড়ে রওনা দিসিলাম। আসার সময় তিন নাম্বারটা না নিয়া দুইটা নিয়া কেন আসলাম এইটা নিয়া শুরু থেকেই মনটা খচখচ করতেসিলো। এইদিকে সীট ভরার পরও গাড়িতে লোক ভরতেই আছে। আমি একদম ঢুকেই বামের সীট, প্রত্যেকটা লোক আমারে পাস করে যাইতেসে। লাস্টে আমার সামনে থেকে শুরু হয়ে বাসের পেছন পর্যন্ত সব দাঁড়ায়া নিসে তাও লোক তুলতেসে। পরের কাহিনী আরও চমকপ্রদ, ময়মনসিংহ যাওয়ার আগেই ২০ কিমি দূরে জ্যামে পড়লো। কিছুই যাওয়ার রাস্তা নাই। এক হাতে বস্তা নিয়ে তাও বাধ্য হয়ে রওনা দিতে হইলো। পরবর্তী দেড় মাইল আমি কেমনে হাঁইটা গেলাম নিজেও জানি না। আমি কিন্তু মাস্ক খুলি নাই। কেবল জানি ভোর সাড়ে ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়ে দেড়টায় ঢাকা পৌঁছাইসি।

Jamuna Tv News Link

এইযে এতদিন বের হই নাই, কেউ ডাকলেও ঘুরতে চাই নাই, বের হইলেও কয়েকটা মাস্ক লাগাইলাম, সব বৃথা। ২০/২১ তারিখ রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেসিলো। ঘুমের মধ্য অনেকক্ষণ দম বন্ধ থাকলে যেমন হয়, তেমন ভাবে ভাঙসে। তবে তাও এত পাত্তা দেই নাই। তবে দিতে হইলো।

২১ তারিখ সন্ধ্যার দিকে গলা খুশখুশ করতে শুরু করলো। ঢোক গিললে অদ্ভূত একটা অস্বস্তি লাগে। রাত যেতে যেতে আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো, আমার আর ঘুম আসে না। কাত হই, উপুড় হই কিছুতেই কিছু হয় না। যখন ঘুম আসলো তখন ভোর ৫ টার কাছাকাছি বাজে। সকাল সাড়ে আটটায় উঠে নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারি নাই। গলা একদম বসে গেছে। কোনো কথাই বের হয় না। তখন সবে শুরু।

সারাদিনে আস্তে আস্তে গলা ঠিক হইলো, কিন্তু গলার ভিতরের খুশখুশ গেল না। ২২ তারিখ রাতের বেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। টের পাইলাম জ্বর আসতেসে। একসময় শরীর কাঁপায়া জ্বর আসলো। লেপ দিয়েও থাকতে পারতেসি না, গুটিসুটি মেরে লেপের ভিতরে ঢুকে গেসি তাও জ্বর কমে না। সারারাত জ্বরে থাকার পর বাধ্য হয়ে নাপা খাইসি। ভোরের দিকে ঘুম আসলো। পরেরদিন থেকে মাস্ক পড়া শুরু করলাম, তাও সিরিয়াস ছিলাম না আসলেই কি করোনা কিনা।

২৩ তারিখ রাতে আসল রূপ দেখা দিল। আমি ঘুমাইতে পারতেসি না। যখনই ঘুম আসে, সাথে সাথে আমার শ্বাস বন্ধ হয়া যায়। কি আজব সমস্যা। রাত ১২ টা থেইকা আড়াইটা পর্যন্ত ট্রাই করসি কোনো লাভ হয় না। আর যখন শ্বাস বন্ধ হওয়ার জন্য ঘুমটা ভাঙ্গে তখন যে কি কষ্টটা লাগে। নেটে সার্চ দিয়ে দেখি স্লীপ এপ্নিয়া বলে আজব একটা রোগ আছে। ঘুমানোর সময় শ্বাস নেওয়ার উপরের পার্টটা তখন নিচে নেমে থাকে, তখন আর শ্বাস নিতে পারে না বলে ঘুম ভেঙে যায়। পরে আবার দেখি এর সাথে কোভিডের কানেকশনও থাকতে পারে লেখা।

Medical Info 1
Medical Info 2

সারারাত ঘুমাইতে পারি নাই। ঐ রাতের প্রতিটা সেকেন্ড আমার মনে আছে। বারবার গন্ধ শুঁকসি। টের পাইসি গন্ধ পাইতেসি কিন্তু তাও যেন অস্পস্ট। বাতাস ঢুকতেসে নাক দিয়ে, কিন্তু তাও কোনো ফিলিংস নাই। বারবার টেনেটেনে বাতাস ঢুকানো লাগতেসে যেন গুণে গুণে না ঢুকাইলে ঢুকবে না। চোখটা বন্ধ করে ঘুমাইতে চেষ্টা করলেই শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়, যেন আমার আলাদা করে জেগে থাকতে হবে শুধু শ্বাস নেওয়ার জন্য।

হিসাব মতে আমি সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা তখন ঘুমহীন। সকালে উঠেই দিদি দাদাবাবুর কথায় আইসিডিডিআরবিতে টেস্ট করালাম। সারাদিন ঘুমাইতে পারি নাই। ঘুমাইতে গেলেই এই সমস্যা। ঐদিকে কাশ বাড়তেসে তখন। ঢোক গিললে গলায় কোথায় জানি বাধে। সারাদিন পড়ে রইলাম। বিকালের দিকে দিদি জানাইলো দাদাবাবুর ঐখানে মেইল গেসে, রিপোর্ট পজেটিভ।

তখনই দাদাবাবু যেতে বলসে, এক্সরে করাইতে নিয়ে যাবে। রেডি হয়ে যাইতে বললো দিদি। আমি কেবল ভাবতাসি আজকে রাতেও না ঘুমাইতে পারলে পাগল হয়ে যাব। দুইদিন ধরে ঘুম নাই আমার। ব্লাড দিলাম টেস্টের জন্য। তখন আবার অনলাইনে ল্যাব ফাইনাল। হাসপাতালে থাকতেই দিতে হইসে। এক্সরে করে অনেক পরে রাত দশটার দিকে ডাক্তারের দেখা পাইলাম আমরা। ডাক্তার কি বলসে? ওষুধ দিসে অনেকগুলা। বলসে তুমি অন্য হাসপাতালে যাও, যদি শুনে তোমার কোভিড পজিটিভ তোমাকে আর মানুষের চোখে দেখবে না, তোমাকে দেখবে পশুপাখি হিসেবে।

ডাক্তারের সেই ওষুধে আমার ঘুম আসলো। যে ৬ ঘন্টা ঘুমাইলাম আমি টেরও পাইলাম না বেঁচে আছি নাকি নাই, এমন ঘুম। আমার আইসোলেশনের দিন শুরু হলো। সারাদিন রুমে থাকা লাগে। এক রুমে দিনের পর দিন কাটতেসে। জ্বর উঠানামা করে, কখনো ১০২ কখনো ৯৯। সারাদিন চোখ জ্বলে, দূর্বল লাগে। গরম পানির ভাপ নেওয়া লাগে।

নেগেটিভ আসলো দেড় মাস পরে, ১১ মে।

*লেখাটা লাস্ট লিখসিলাম ২৬ এপ্রিলে। ভাবসিলাম দিব না, দিলাম যদি কারো এমন সিম্পটম্প দেখা দেয়।*

3rd June, 2021