কিছু স্মৃতি

আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। যদিও নাইন-টেনে পড়ার সময়েই আমার জীবনে সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য সময়গুলো গিয়েছে (আপাতত), কিন্তু ক্লাস সেভেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। সিক্সে যখন আঞ্জুমান স্কুলে ভর্তি হলাম, তখন পুরো একটা বছর লাগল মানিয়ে নিতে। নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ। সেভেনে যখন উঠলাম তখন অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি। ক্লাসে তখন লিখন আর অমিত নামে দুজন ছিল, যাদের চেহারা আমার কাছে অবিকল এক মনে হতো! বুঝতে পারতাম না অন্যেরা তাদের আলাদা করতে পারত কীভাবে। পরে একটা জিনিস ধরতে পারলাম। একজন শার্ট ইন করে, আরেকজন করে না (!) যদিও এখন তাদের খুব সহজেই চেনা যায়!

আমি ছিলাম গোয়েন্দা বইয়ের বিশাল ভক্ত! সিক্সের শেষের দিকে আরেকজন গোয়েন্দা বই ভক্ত বন্ধু মিলে যায়। প্রসেনজিত্‍ সরকার পৃথু। দুজনে মিলে রিক্সাভাড়ার টাকা জমিয়ে আজাদ লাইব্রেরী থেকে 'তিন গোয়েন্দা'র বই কিনে আনতাম। সে কী আগ্রহ আমাদের বই কেনার! তার পছন্দের বই ছিল সম্ভবত হেনরী রাইডার হ্যাগার্ডের 'শী'। আমরা তো ঠিকই করে ফেলেছিলাম, একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলব! সেটার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কয়েকটা যন্ত্রপাতি কেনার কথা ছিল। কিন্তু একটা বিশেষ 'দুর্ঘটনা'য় সেই প্ল্যান আঞ্জুমান স্কুলের টিনশেডের নিচে মারা যায়! (আমাকে গল্পের বইয়ের জগতে ঢুকানোর কৃতিত্ব ২য় বোনের, আর গোয়েন্দা গল্পের জগতে জগতে ঢুকানোর বিশেষ কৃতিত্ব ১ম বোনের) এই গোয়েন্দা বই কিনতে যাবার সময়েই রাস্তায় প্রথম কথা হয় পিয়ালের সাথে।

তাপস স্যারের বাসা বন-বিভাগের ভিতরে। গণিত পড়ার জন্য তখন আমরা বেশ কয়েকজন স্যারের বাসায় পড়তে যেতাম। তবে পড়া যত হতো, তার চেয়ে খেলা হতো ঢের বেশি! স্যার এখনোও ঘুমোচ্ছে? অসুবিধে কী!!! বল আছে, ব্যাট আছে, বনবিভাগের ভিতরে মাঠ আছে, কিংবা আধুনিক সদর হাসপাতালের জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তা আছে, আর তুখোড় কয়েকটা 'শাখামৃগ' তো আছেই! সঙ্গে সঙ্গেই খেলা শুরু। যারা একটু দেরিতে আসত, তারা তো জানেই আমাদের আসল 'পড়া' কোথায় হয়! খেলা উঠত জমে, ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত! হাসপাতালের পাশে আর পেছনে কতগুলো তিনতলা ভাঙ্গা, দরজা-জানালাহীন ভবন রয়েছে। আমাদের কাছে ঐগুলো ছিল রহস্যের খাসমহল! গোয়েন্দাগিড়ির প্রথম লক্ষণ হলো কৌতুহল। আমরা প্রাইভেট থেকে আসার সময় লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ ভবনগুলোতে উঠতাম, গবেষণা করতাম আর ঘন ঘন মাথা নাড়াতাম! শেষে কোনো কিছু না বুঝে সামনের মাঠে হতাশ হয়ে খেলা শুরু করতাম। কিন্তু 'সুখে থাকলে ভূতে কিলায়'। আমাদের কিলানো হয় নি, দৌঁড়ানো হলো! স্যার দেখে ফেলল!

সুখের দিনগুলোও শেষ হলো। এরপরেও জীবন থেমে থাকে না। অনেককিছু হয়েছে। কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট ঐ সময়গুলোর কথা এখনো ভুলতে পারিনি। খুব মনে পড়ে...

(বি.দ্র.:- ২ না ৩ বছর আগে হাসপাতালের ঐ ভবনগুলো পাশের কোন ভবনে একটা খুন হয়ে যায়। এরপর থেকেই ভবনগুলো একেবারে জনশূন্য হয়ে পড়ে।)

6th May, 2015